ইসি-সিইসির লাজ লজ্জা শরম কিছুই নেই: মির্জা ফখরুল

ইসি-সিইসির লাজ লজ্জা শরম কিছুই নেই: মির্জা ফখরুল

নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার লাজ-লজ্জা-শরম-হায়া কিছুই নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচনের ফলাফল বাতিল এবং পুনঃভোটের দাবিতে শনিবার (১৪ নভেম্বর) জাতীয় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে একথা বলেন তিনি।

 

ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল বাতিল, পুনঃভোট ও নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে শনিবার ও পরদিন রোববার দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতা-কর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেন।

বাংলাদেশের নির্বাচন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শেখার আছে বলে মন্তব্যের জন্য সিইসির সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, কী হাস্যকর, কী অদ্ভুত কথা এবং কী লজ্জার কথা। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) ৫ দিনেও ফলাফল ঘোষণা করতে পারে না, এটা আমরা ৫ মিনিটে পারি। এটা তো পারবেন এজন্যই যে, আপনাদের ফলাফল আগে থেকে তৈরি করা থাকে। এই নির্বাচন কমিশন তাদের লজ্জা-শরমও করে না, তাদের হায়া বলে কিছু নেই। যদি থাকতো, অনেক আগেই তারা পদত্যাগ করে চলে যেত।

ফখরুল বলেন, আজকে সারা পৃথিবী জানে, বাংলাদেশে একটা কর্তৃত্ববাদী সরকার, একটা একনায়ক সরকার, একটা ফ্যাসিবাদী সরকার অধিষ্ঠিত হয়ে আছে। আমাদের কথা নয়, আমেরিকান ৭/১০ জন সেনেটর চিঠি দিয়েছে সিনেট প্রধানের কাছে, বাংলাদেশে আজকে বেআইনিভাবে বিনা বিচারের প্রায় ৪০০ লোককে হত্যা করা হয়েছে।

বিএনপির ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এক লাখের বেশি মামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারণ একটাই, বিরোধী দলকে এখান থেকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে, বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। এখানে ভিন্নমত রাখা যাবে না। আজকে পত্র-পত্রিকা কিছু লিখতে পারে না, সাংবাদিকদের জেল দিয়ে দিচ্ছেন, সাংবাদিকদের হত্যা করছেন।

উপনির্বাচনের দিন রাজধানীতে বাসে আগুন লাগানোর ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, বিএনপি কোনো সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই এখন পর্যন্ত প্রত্যেকটা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যে, গণতন্ত্র ও নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হবে। অন্য কোনোভাবে আমরা সরকার পরিবর্তনের কথা চিন্তাও করি না।

আওয়ামী লীগ নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, শুধু নির্বাচনী ব্যবস্থা নয়, পুরো গণতন্ত্রকে তারা ধবংস করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের বংশবদ অযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যতগুলো নির্বাচন এই সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, প্রত্যেকটা নির্বাচন তাদের পক্ষে লুট করে নিয়ে গেছে এবং জনগণের আস্থা এই নির্বাচন ব্যবস্থার উপর ক্রমেই শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে।

ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোটের হার দেখিয়ে তিনি বলেন, এত সন্ত্রাস, এত কারচুপি, এত ভয়ভীতি প্রদর্শন করার পরেও এখানে ১৪ শতাংশের বেশি ভোট তারা (নির্বাচন কমিশন) দেখাতে পারেনি।

ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার থাকলে কখনও কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন চাই। সেজন্য সরকারকে বলব, পদত্যাগ করুন। অন্যথায় প্রত্যেকটি স্বৈরাচার, প্রত্যেকটি কর্তৃত্ববাদী সরকার যেভাবে বিদায় হয়েছে আপনাদেরকে জনগণের উত্তাল আন্দোলনের বিদায় হতে হবে।

এই পরস্থিতি বদলাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক নেতা খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। সে বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এই সরকারই বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার ইচ্ছাতেই দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় তরুণ নেতা তারেক রহমান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এক লক্ষের বেশি মামলা দিয়ে আমাদের ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর কারণ একটাই, বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে হব, বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে এবং ভিন্নমতকে এখানে রাখা যাবে না।

ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের পরিচালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শহিদুল ইসলাম বাবুল, রফিকুল ইসলাম, আকরামুল হাসান, ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীর বক্তব্য রাখেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন